Translate

বুধবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১৫

বাঙ্গালী রমনীদের টিপঃ একটি ৯৭ শতাংশীয় ইতিহাস।

বাংলাদেশের অনেক মুসলিম মেয়ে টিপ পরতে ভালোবাসে। কিন্তূ আপনি জানেনকি,টিপ যে একটি বিশেষ ধর্মের পরিচয় ও সংস্কৃতির অংশ? শুধুমাত্র তা কিন্তূ নয়। ইসলামে টিপের একটি ইতিহাস আছে।

হযরত ইব্রাহিম(আ) কে হত্যা করার জন্য নমরুদ একটি ১৮ মাইলের বিশাল অগ্নিকুণ্ড নির্মাণ করে। সেটি এত বড় ও ভয়াবহ উত্তপ্ত ছিল যে, কোন মানুষের পক্ষে ইব্রাহিমকে সেখানে নিয়ে নিক্ষেপ করা সম্ভব হল না। অবশেষে সে একটি যন্ত্র নির্মাণ করল যার সাহায্যে দূর থেকেই ইব্রাহিমকে অগ্নিকুণ্ডের ভিতরে নিক্ষেপ করা যাবে। কিন্তূ ফেরেশতারা সেটাতে ভর করে থাকায় যন্ত্রটি কাজ করছিল না। শয়তান এসে নমরুদকে বুদ্ধি দিল যে, কয়েকজন বেশ্যাকে এনে যদি যন্ত্রটিকে স্পর্শ করানো যায় তাহলে সেটা কাজ করবে। নমরুদ তাই করল এবং দেখা গেল যে সেটি কাজ করছে।

নমরুদ ওই বেশ্যাদের কপালে চিহ্ন দিয়ে রাখল এই ভেবে যে, এদেরকে পরে দরকার হতে পারে। সেই থেকে কপালে টিপ পরার প্রচলন হল।

কিন্তূ দুঃখ এই যে, যেসব মুসলিম নারী টিপ পরে, তারা এই ঘটনা জানেনা। জেনেও যদি কেউ পরে তাহলে সেটা তার দুর্ভাগ্য।

হিন্দুরা টিপ পরে, এটা তাদের ধর্মীয় সংস্কৃতির অংশ। কিন্তু আমরা মুসলিমরা টিপ পরি কেন? এটাতো ইসলামেরপরিপন্থী।

যেসব উপায়ে ধ্বংস হবে পৃথিবী

পৃথিবী কী করে ধ্বংস হবে? চমকে উঠলেন? পৃথিবী ধ্বংস হবে? সত্যিই? কবে? নিশ্চয়ই এটাই ভাবছেন আপনি। না! ধ্বংস হচ্ছে না পৃথিবী আপাতত। কিন্তু যদি কোনোদিন হয়ে যায়ই তাহলে এর পেছনে ঠিক কী কী কারণ থাকতে পারে? আসুন জেনে নিই পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পেছনে থাকা সম্ভাব্য যুক্তিসংগত কিছু কারণ।
১. সূর্যরশ্মির ঝড়
সূর্যের উপস্থিতি পৃথিবীর টিকে থাকবার জন্যে প্রচন্ড দরকার। গাছপালা, মানুষ, পশু-পাখি, এমনকি নদ-নদী খাল-বিল সমুদ্রসহ পানির সব উৎসের ঠিকঠাক টিকে থাকবার জন্য আমাদের দরকার এই সূর্য। না! সূর্য হারিয়ে যাচ্ছেনা। অথবা গেলেও সে ভয় আমাদের সহসাই করতে হচ্ছেনা। কিন্তু সূর্যের এই না হারিয়ে যাওয়া, দিনের পর দিন উপস্থিতিই আবার হয়ে যেতে পারে পৃথিবীর ধ্বংসের কারণ। কী করে? বলছি! সূর্যরশ্মি আমাদের গ্রহে খুব দ্রুত সকাল হবার সঙ্গে সঙ্গে এসে উপস্থিত হয়। ছড়িয়ে দেয় এর আলো আর উষ্ণতা। তবে সেটা একটু পাল্টে যায় ঠিক ১১ বছর পরপর। ১১ বছর পর সূর্যের জীবনে আসে সোলার ম্যাক্স, যখন এটি তার সবচাইতে শক্তিশালী সূর্যকিরণটি পৃথিবীতে সেকেন্ডের ভেতরে পাঠিয়ে দেয়। আর খুব দ্রুত সেটা এসে আঘাত হানে পৃথিবীতে। ভাবছেন অতটুকু একটু সূর্যরশ্মি আঘাত কী করে হানতে পারে? পারে! আর পারে যে সেটার জলজ্যান্ত উদাহরণ ১৯৮৯ সালের কানাডার কিউবেক। কিউবেক শহরে সেবার আঘাত হেনেছিল এমনই এক রশ্মি। যেটা কিনা ঠিকঠাক করতে করতে লেগে যেতে পারে কোটি কোটি ডলার আর তার আগেই যেটা কেড়ে নিতে পারে অনেক প্রাণ আর সম্পদ। বিজ্ঞানীদের মতে যদি এমনটাই ঠিকঠাকভাবে চলতে থাকে তাহলে পৃথিবীতে প্রাণকে টিকিয়ে রাখার অন্যতম মাধ্যম এই সূর্যই হয়ে উঠতে পারে পৃথিবীর ধ্বংসের কারণ।
ভূ-গর্ভস্থ গ্যাস
আমাদের সাগরগুলো এমনিতে বেশ নিরীহ আর যথেষ্ট সুন্দর হলেও বিজ্ঞানীদের কথানুসারে এর একদম গভীরে রয়েছে ক্ল্যাথরেটস নামের একটি স্তর যেখানটায় জমা রয়েছে প্রচুর পরিমাণে মিথেন গ্যাস। এমনিতে এটি সাগরের তলায় লুকিয়েই থাকত। তবে দিনকে দিন যে হারে গ্রীন হাউজ এফেক্ট কাজ করছে পৃথিবীতে আশঙ্কা করা হচ্ছে হঠাৎ করেই হয়তো একদিন পানির নীচ থেকে বেরিয়ে বোমার মতন বিস্ফোরিত হবে এই মিথেনের স্তর। আর তখন? প্রচন্ড শক্তিশালী কোনো বোমার আঘাতের মতন তছনছ হয়ে যাবে পৃথিবী।
পারমানবিক যুদ্ধ
বর্তমানে প্রতিটি দেশই পারমানবিক শক্তি অর্জন করছে কিংবা করার চেষ্টা করছে। যদিও প্রচন্ড শক্তিশালী এই অস্ত্রটি ব্যবহারের ব্যাপারে বিশ্বব্যাপী নানারকম সংস্থার নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। রয়েছে অনেক নিয়ম-কানুন। তবে সমস্যার শুরুটা হয় সেই স্নায়ু যুদ্ধের সময়। সে সময় আমেরিকা আর ইউএসএসআর মুখোমুখি দাড়িয়েছিল একে অন্যের। দুজনের হাতেই ছিল পারমাণবিক অস্ত্র। দিনকে দিন সেটাকে উন্নত করে যাচ্ছিল তারা আর একে অন্যকে ভয় দেখাচ্ছিল। যদিও এই ব্যাপারটা কেবল ভয় দেখানো আর হুমকির ভেতরেই সীমাবদ্ধ ছিল, অনেকেই ভেবেছিলেন এবার বুঝি পৃথিবী শেষ হয়ে গেল। সত্যি বলতে কী তখন যুদ্ধটা লেগে গেলে সেটা হতে বেশি সময়ও লাগত না। কিন্তু না! শেষ অব্দি হার মেনে ভেঙে গেল ইউএসসার। একবার ভাবুন তো, তখন দুটি দেশের কাছে অস্ত্র ছিল। তাতেই পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কথা ভাবছিল সবাই। আর বর্তমানে? পৃথিবীর অনেক দেশেই আছে পারমানবিক অস্ত্র। আর যাদের হাতে নেই তারা সাহায্য নিচ্ছে পারমানবিক অস্ত্রধারী দেশগুলো। তাই মনে করা হয়, কখনো যদি পৃথিবী ধ্বংস হয়েও যায় সেটার পেছনে পারমাণবিক যুদ্ধের বেশ বড় একটা হাত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
উল্কা বিস্ফোরণ
আগের গুলোতে কোনো না কোনোভাবে ছিল মানুষের হাত। প্রথম আর দ্বিতীয়টায় মানুষের তৈরি গ্রীন হাউজ এফেক্ট এবং পরেরটাতে মানুষে মানুষে যুদ্ধ- এই তো ছিল পৃথিবী ধ্বংসের সেরা সম্ভাব্য কারণগুলোর ভেতরে কয়েকটি। তবে এবার যেটার কথা বলব সেটা কিন্তু কোনোভাবেই মানুষের তৈরি করা কারণ নয়। এটা তো সবাই-ই জানে যে একটা সময় পৃথিবীতে বাস করত ডাইনোসর। আর সেই ইয়া বড় বড় ডাইনোসরের হঠাৎ করে নেই হয়ে যাওয়ার পেছনে দায়ী করা হয় একটি উল্কাকে। মনে করা হয় পৃথিবী থেকে ৬ মাইল দূর দিয়ে যাওয়ার সময় এখানে বসবাসরত সব ডাইনোসরকে মেরে ফেলেছিল সেটি। বিশেষজ্ঞদের ভেতরে অনেকের ধারণা যদি মানুষ এবং এই পৃথিবী ও এর সভ্যতা ধ্বংস হয়ে যায় তাহলে তার কারণও হবে এই উল্কাটি। তবে এবার ছয় মাইল নয়, এক মাইল দূর থেকেই পুরো মানব সভ্যতা আর পৃথিবীকে ধ্বংস করে দেবে সেটি। ভয়ের কথা হচ্ছে, মানুষের হাতে পারমানবিক শক্তির মতন এত বড় বড় ব্যাপার থাকলেও এখনো অব্দি সেই উল্কাটিকে ধ্বংস করবার মতন অস্ত্র তৈরি করতে পারেনি কেউ।
সুপার আগ্নেয়গিরি
আমাদের পৃথিবী জুড়ে রয়েছে অনেকগুলো আগ্নেয়গিরি। এর সংখ্যা প্রায় ৫০০টি। তবে আপনি জানেন কী এই আগ্নেয়গিরির ভেতরে মোট ৪টি আগ্নেয়গিরি রয়েছে, যাদের ভেতরে রয়েছে পৃথিবীকে ধ্বংস করে দেওয়ার মতন ক্ষমতা। আর এই চারটি আগ্নেয়গিরিকেই ডাকা হয় সুপার আগ্নেয়গিরি নামে। এই চারটি বিশেষ আগ্নেয়গিরির নাম হচ্ছে- আমেরিকার ইয়োলোস্টাইন, ইন্দোনেশিয়ার লেক টোবা, নিউজিল্যান্ডের টাউপো ও জাপানের অ্যায়রা কালডেরা। অন্যদের চাইতে অনেক বেশি আলাদা এই চার আগ্নেয়গিরির কোনো একটা উদগীরণ করলেও সেটি প্রায় ২০০০ মিলিয়ন সালফারিক এসিড বের করে দেবে যাতে কেবল পৃথিবী একা নয়, ঢাকা পড়বে সূর্যও!
ভিনগ্রহবাসী
ভিনগ্রহবাসী? হাসছেন নিশ্চয়। যেটা এখনো আছে কিনা, থাকলেও দেখতে কেমন সেটা কিছুই জানা যায়নি তার জন্যে আবার ভয়? কিন্তু ভয়টা কিন্তু সবার এখানটাতেই। আমরা সত্যিই কেউ জানিনা ভিনগ্রহবাসীরা আছে কিনা। তাই হঠাৎ করে তারা আক্রমণ করে বসতেই পারে। আমরা জানিনা তারা কেমন বা কতটুকু হিংস্র ও পারদর্শী এবং উন্নত। ফলে তাদের সঙ্গে ঠিক কী করে জিতে ফেলা যাবে আর মুক্ত করা যাবে পৃথিবীকে সেটাও আমরা জানিনা। আমাদের এত এত অস্ত্র-শস্ত্র, সেগুলোও সেসময় কোনো কাজে আসবে কিনা তাও আমরা জানিনা। বিজ্ঞানীরা অনেক চেষ্টা করছেন ভিনগ্রহবাসীদের সত্যতা জানতে। অনেকে কখনো কখনো পেয়েছেন অদ্ভূত সব আলো, উত্তর, শব্দ এবং ইউএফওর খোঁজ। বেশকিছু স্থানে ভিনগ্রহবাসীদের এই যান দেখা গিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। অনেকে আবার আমাদেরকেই ভিনগ্রহবাসীদের বংশধর মনে করেন। এত এত ধারণা আর তত্ত্বের ভেতর থেকে সত্যিকারভাবে কিছু না বোঝা গেলেও ভিনগ্রহবাসীদের দ্বারা পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার সম্ভাবনাকে কিন্তু একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায়না।

বিশ্বের ইহুদি জাতির ৩০০০ বছরের ইতিহাস

সাংবিধানিকভাবে ইহুদি ইসরাইলের রাষ্ট্রীয় ধর্ম (বাংলাদেশের মত) হলেও, সকল নাগরিকের যার যার ধর্ম পালনের সম্পূর্ণ অধিকার বিদ্যমান। যে কারণে দেশটির জনসংখ্যার ৭৫.৪% ইহুদি, ১৬.৯% আরব মুসলিম, ২.১% আরব খৃষ্টান, ১.৭% দ্রুজ মুসলমান, ৪% নাস্তিক ও অন্যান্য ধর্ম অনুসরণ করে। ইসরাইলি পার্লামেন্ট ভবনেও মুসলিমদের জন্য মসজিদ বিদ্যমান। দেশটিতে সাংসদ, একজন কেবিনেট মন্ত্রী ও সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতি পদেও আরব মুসলমানরা আছে। দেশটির জাতীয় ভাষা হিব্রু কিন্তু দাপ্তরিক ভাষা আরবি ও ইংরেজি। রাস্তায় বিলবোর্ড ও সড়ক নির্দেশিকা হিব্রু, আরবি ও ইংরেজি ভাষায় লিখিত। স্কুলে সকল শিক্ষার্থীর হিব্রু, আরবি ও ইংরিজ ভাষা শেখা বাধ্যতামূলক। আরব মুসলিমরা প্রধানত ইসরাইলের গালিল, নাজেভ, হাইফা, জেরুজালেম, আক্রি ও রামাল্লায় বসবাস করে। ১,১৫,০০০ দ্রুজদের সবার বসবাস গোলাম মালভূমিতে।
ইহুদি-বিদ্বেষের ধারাবাহিকতা :
ইহুদি-বিদ্বেষ বলতে ইহুদি জাতি, গোষ্ঠী বা ধর্মের প্রতি যেকোনো ধরণের বৈরিতা বা কুসংস্কারকে বোঝানো হয়ে থাকে। এ ধরণের বিদ্বেষের মধ্যে ব্যক্তিগত ঘৃণা থেকে শুরু করে সংঘবদ্ধ জাতি-নিধনও পড়ে। ইংরেজিতে একে বলা হয় এন্টি-সেমিটিজম (Anti-Semitism), যার অর্থ দাঁড়ায় সেমিটিয় সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ। সেমিটিয় একটি বৃহৎ ভাষাভাষী গোষ্ঠী, যার মধ্যে হিব্রুভাষী ছাড়াও আরবি ভাষীরাও অন্তর্ভুক্ত। তথাপি অ্যান্টি-সেমিটিজম ইহুদি-বিদ্বেষ বোঝাতেই ব্যবহৃত হয়। উনিশ শতকের পূর্বে ইহুদি-বিদ্বেষ ছিল মূলত ধর্ম-ভিত্তিক। খ্রিস্টান ও মুসলমানরা ইহুদি ধর্মের ব্যাপারে তাদের নিজস্ব ধর্মীয় ব্যাখ্যা ও দৃষ্টিকোণের আলোকে এই বিদ্বেষভাব পোষণ করতো। তৎকালীন খ্রিস্টান-শাসিত ইউরোপে বৃহত্তম সংখ্যালঘু ধর্মীয়-গোষ্ঠী হিসেবে ইহুদিরা বিভিন্নসময় ধর্মীয় বিদ্বেষ, নির্যাতন ও সহিংসতার শিকার হত। ধর্মীয় নির্যাতনের মধ্যে ছিল ধর্ম-পালনে বাধা, জোরপূর্বক ধর্মান্তরকরণ, দেশ থেকে বিতাড়ন ইত্যাদি। শিল্প-বিপ্লবের পর ইহুদিদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি ঘটতে থাকে দ্রুত। এ সময় ইউরোপে জাতীয়তাবাদের বিকাশ ঘটলে, ইহুদিদের প্রতি জাতিগত বিদ্বেষ দেখা দেয়। জাতিতত্ত্ব সংক্রান্ত অপ-বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা এই বিদ্বেষে ইন্ধন যোগায়। ইহুদিরা অনার্য ও আর্যদের চেয়ে হীন, এমন মতবাদ দেয়া হয় এবং জাতিগতভাবে তাদের বিরুদ্ধে অর্থলিপ্সা, শ্রমবিমুখতা, ধূর্ততা, গোত্রপ্রীতি ও দেশপ্রেমহীনতার অভিযোগ আনা হয়। তৎকালীন ইউরোপীয় বুদ্ধিজীবী সমাজ ধর্মভিত্তিক বিদ্বেষকে অসংস্কৃত আচরণ মনে করলেও, এই বংশানুগতিক অপতত্ত্বকে 'বৈজ্ঞানিক' তত্ত্ব মনে করে এ ধরণের জাতিগত সংস্কারের যথার্থতা স্বীকার করে নেয়। ১৯৪১, বাবি ইয়ার (Babi Yar) এর গণহত্যা, দুইদিনের ব্যবধানের যেখানে নাৎসী ও স্থানীয় ইউক্রেনীয় বাহিনী প্রায় ৩৩,০০০ ইহুদিকে গুলি করে হত্যা করে। এই জাতিগত বিদ্বেষ ভয়াবহ চরম আকার ধারণ করে কুড়ি শতকের তৃতীয় দশকে, হিটলারের নাৎসি দল-শাসিত জার্মানিতে। ইহুদি-বিরোধী এই জাতিতত্ত্বের উপর ভিত্তি করে এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়ের দায়ও ইহুদিদের উপর চাপিয়ে দিয়ে তারা বিভিন্ন অত্যাচার এবং নিধনমূলক আইন-কানুন প্রণয়ন করে। ১৯৩৯ সালে হিটলার বিভিন্ন দেশ আক্রমণের মাধ্যমে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূত্রপাত ঘটালে, ইউরোপে ইহুদি নির্যাতন ও নিধন চরমরূপ নেয়। তারা আইন করে ইহুদিদের নিজস্ব নিবাস অধিগ্রহণ করে বন্দী-নিবাসে প্রেরণ করে এবং পর্যায়ক্রমে ইহুদিদের হত্যা করে। তখন প্রায় ৬০ লক্ষ ইহুদিকে হত্যা করা হয়, যা ইতিহাসে 'হলোকস্ট' (Holocaust) নামে পরিচিত।
ইসরাইল-প্যালেস্টাইনের (প্রাক্তন কেনান) আদিবাসীরা কখনো মুসলিম বা খৃষ্টান ছিল না। ইহুদিদের পূর্বপুরুষ ছিল যা্যাবর হিব্রু জাতি, যাদের উদ্ভব মূলত ইরাকের মেসোপটেমিয়া অঞ্চলে। মূল ইসরাইল অঞ্চলের আদিবাসীদের হটিয়ে দিয়ে তারা সেখানে বাস করা শুরু করে। ঐ ভূখন্ড তাদের ধর্মীয় গ্রন্থ অনুসারে ঈশ্বর স্বয়ং তাদের প্রদান করেছে, যার বর্ণনা পাওয়া যাবে তাদের পবিত্র ধর্মীয় গ্রন্থ তৌরাতে এভাবে “মাবুদ ইব্রাহিমকে বললেন, তুমি তোমার নিজের দেশ, আত্মীয় স্বজন ছেড়ে, আমি তোমাকে যে দেশ দেখাবে সে দেশে যাও” (পয়দায়েশ ১১:১২), মূলত বর্তমান ’ইসরাইল’ বা ’কেনান’ সম্পর্কেই তাদের পুস্তকে এ কথা বলা হয়েছে (যেমন বহু মুসলমান বিশ্বাস করে, পুরা পৃথিবীকেই দারুল ইসলাম বানাতে হবে, আল্লাহ তাদের পৃথিবী দিয়ে দিয়েছেন), আসলে এই ভূখন্ড আরো বিস্তৃত ইরাকের দজলা-ফোরাত থেকে মিশরের নীল নদ পর্যন্ত (জেনেসিস--পুরাতন খন্ড), প্যালেস্টাইনীরা আদিবাসীও প্রাচীন ক্যানানাইট, জেবুসাইট, সামারিটান ইত্যাদি জাতির বংশধর। জেনেটিকালি তারা জিওনিস্ট প্রতিবেশী ইহুদিদেরই কাছাকাছি। ষষ্ঠ শতকে ইসলামী শাসন প্রবর্তনের পর হেজাজ অঞ্চলের আরবদের সাথে তাদের রক্তের সংমিশ্রণ ঘটে (যদিও তারা উভয়ই আবার সেমেটিক এবং জেনেটিকালি খুব কাছাকাছি), ইহুদিরা এক সময় আরামাইক (ঈসা বা যিশুর মাতৃভাষা) হিব্রু, এমনকি আরবি ভাষাতেও কথা বলত। ইউরোপীয় ইহুদিদের অনেকেরই ভাষা ছিল তখন ঈদ্দিশ। বর্তমান ইসরাইলী ইহুদিরা তাদের মৃত হিব্রু ভাষাকে জীবিত করেছে নানা বুদ্ধিমত্তায়, যা বিলুপ্ত ঈদ্দিশের আধুনিকায়ন।
এ ব্যাপারে ৩০১৪ সনের ঐতিহাসিকেরা যেভাবে ইহুদী জাতিকে বিশ্লেষণ করবে :
২০১৩ সনের প্রায় ৫০০০ বছর আগে সুমেরু দেশের উর শহরে আব্রাম নামে এক লোক বাস করতেন, যাকে ইহুদীরা তাদের ‘জাতির পিতা’ ও নবী মনে করতো। তিনি আদেশ পেলেন যে, স্রষ্টা তথা ‘যিহোবা’কে মেনে চললে ‘যিহোবা’ তাদের এমন এক দেশ উপহার দিবেন, যেখানে শান্তি-ই শান্তি! আব্রাম বা পরবর্তীতে আব্রাহাম তার জাতি তথা ইহুদীদের কল্যাণের জন্যে যিহোবার সাথে এভাবে এক ‘চুক্তির’ মাধ্যমে যে ‘শান্তির দেশে’ তার জাতিকে নিয়ে গিয়েছিলেন তার নাম ছিল ‘কেনান’ (প্যালেস্টাইন-ইসরাইল)।
২০১৪ সনের পূর্ববর্তী প্রাচীন পৃথিবীতে Judaism ছিল ইহুদী ধর্মের প্রতিশব্দ, যারা ছিলো বিশ্বের প্রাচীনতম জাতি ও ধর্মধারী। ‘যিহোবা’কে তারা বিশ্বের একমাত্র স্রষ্টা মনে করতো। যিহোবার অন্য নাম ছিল ‘‘ইয়াহওয়া, যোহেভান, ইলোহিম, শেখিনা, মাকোম’’ ইত্যাদি। এটি আব্রাম কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ও মোজেস কর্তৃক প্রবর্তিত বিশ্বের প্রথম কিংবা প্রধানতম একেশ্বরবাদী ধর্ম ছিল। ইহুদীরা পৃথিবীর সর্বত্র বসবাস করতো প্রাচীনকাল থেকেই। যখন যেখানের যে ধর্ম তাই তারা অনুসরণ করতো। ব্যাবিলনে থাকাকালীন ব্যাবিলনের ধর্ম, আবার মিশরে বসবাসের সময় মিশরীয় ফারাওদের ধর্ম মানতো ইহুদীরা। স্রষ্টা তথা ‘যিহোবা’কে মেনে চললে ‘যিহোবা’ তাদের এমন এক দেশ উপহার দিবেন, যেখানে শান্তি-ই শান্তি! আব্রাম বা পরবর্তীতে আব্রাহাম তার জাতি তথা ইহুদীদের কল্যাণের জন্যে যেহোবার সাথে এভাবে এক ‘চুক্তির’ মাধ্যমে যে ‘শান্তির দেশে’ তার জাতিকে নিয়ে গিয়েছিলেন তার নাম ছিল ‘কেনান’ (প্যালেস্টাইন), ইহুদীদের প্রথম মন্দিরে নুহের জাহাজ, কল্পিত ‘চিরুবিম’ পশুর মূর্তি ছিল। ‘চিরুবিম’ ছিল আকাশে ভাসমান উড়ন্ত এ্যাঞ্জেল, যাতে উপবেশন করতো ‘যিহোবা’ নিজে। ইহুদীরা তাদের প্রার্থনালয়ে ‘যিহোবা’র কোন মূর্তি রাখতো না কেবল তার পুজো করতো। আবার তারা ‘যিহোবা’ কে ভুলে গিয়ে বেল, মার্ডুক ইত্যাদি দেবতার পুজোও শুরু করে দিয়েছিল বিভিন্ন সময়ে। পূজা থেকে বাদ পড়ার কারণে ‘যিহোবা’ তাই রেগে তাদের শাস্তি দেন কখনো কখনো। পর্যায়ক্রমে তাদের উপর বিশেষ প্রতিনিধি বা নবী ধারাবাহিকভাবে প্রেরণ শুরু করে ইহুদীদেরকে ‘যিহোবা’র পথে আনা ও ধরে রাখার জন্যে। এরূপ অনেক প্রেরিত প্রতিনিধির মধ্যে বিশেষ একজন ছিলেন নবী ‘মোজেস’ যাকে ২০১৪ সনের মুসলমানরা ‘মুসা’ বলতো।

বিশ্বের ইতিহাস

বিশ্বের ইতিহাস বলতে এখানে মানুষের ইতিহাস বোঝানো হয়েছে, যা মূলত প্যালিওলিথিক যুগে পৃথিবী জুড়ে শুরু হয়। পৃথিবী গ্রহের ইতিহাস থেকে এটি পৃথক। আদিম যুগ থেকে প্রাপ্ত সকল প্রত্নতাত্ত্বিক ওলিখিত দলিল এর আওতাভুক্ত। লেখন রীতি আবিস্কারের মধ্য দিয়ে প্রাচীন প্রামাণ্য ইতিহাসের[১] শুরু হয়।[২][৩] যদিও লেখন রীতি আবিস্কারপূর্ব যুগের সভ্যতার নিদর্শনও পাওয়া গেছে। প্রাগৈতিহাসিক যুগের সূচনা ঘটে প্যালিওলিথিক বা আদি প্রস্তর যুগে। সেখান থেকে সভ্যতা প্রবেশ করে নব্য প্রস্তর যুগ বা নিওলিথিক যুগে এবং কৃষি বিপ্লবের (খ্রিষ্টপূর্ব ৮০০০-খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০০ অব্দ) সূচনা ঘটে। নিওলিথিক বিপ্লবে উদ্ভিদ ও পশুর নিয়মানুগ চাষপদ্ধতি রপ্ত করা মানব সভ্যতার একটি অনন্য মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত।[৪][৫][৬]কৃষির উন্নয়নের সাথে সাথে বেশিরভাগ মানুষ যাযাবর জীবনযাত্রা ত্যাগ করে স্থায়ীভাবে কৃষকের জীবন গ্রহণ করে। তবে বহু সমাজে যাযাবর জীবনব্যবস্থা রয়ে যায়, বিশেষ করে ভৌগোলিকভাবে বিচ্ছিন্ন অঞ্চল ও যেখানে আবাদযোগ্য উদ্ভিদ প্রজাতির অভাব রয়েছে। কৃষি থেকে প্রাপ্ত খাদ্য-নিরাপত্তা ও উদ্বৃত্ত উৎপাদন এর ফলে গোষ্টীগুলো ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়ে আরও বড় সামাজিক প্রতিষ্টানের জন্ম দেয়। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নও এক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।
কৃষির উন্নতির সাথে সাথে শস্য উৎপাদনব্যবস্থারও বিকাশ ঘটে, যা সমাজে শ্রমবিভাগকে ত্বরান্বিত করে। শ্রমবিভাগের পথ ধরে সমাজে সুবিধাপ্রাপ্ত উচ্চশ্রেণীর উন্মেষ ঘটে ও শহরগুলো গড়ে উঠে। সমাজে জটিলতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে লেখন ও হিসাব পদ্ধতির ব্যবহার জরুরী হয়ে পড়ে।[৭] হ্রদ ও নদী তীরবর্তী এলাকাগুলোতে খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০০ অব্দের মধ্যে অনেক শহর গড়ে উঠে। এদের মধ্যে উন্নতি ও উৎকর্ষতার দিক দিয়ে মেসোপটেমিয়ার সভ্যতা,[৮] মিশরের নীলনদ তীরবর্তী সভ্যতা[৯][১০][১১] ও সিন্ধু সভ্যতা[১২][১৩][১৪] উল্লেখ্যযোগ্য। একই ধরণের সভ্যতা সম্ভবত চীনের প্রধান নদীগুলোর তীরেও গড়ে উঠেছিল কিন্তু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো থেকে এব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হয়নি।
প্রাচীন পৃথিবীর(প্রধানত ইউরোপ, তবে নিকট প্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকাও অন্তর্ভুক্ত) ইতিহাসকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়। ৪৬৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত প্রাচীন যুগ; ৫ম থেকে পঞ্চদশ শতাব্দী পর্যন্ত মধ্য যুগ,[১৫][১৬] যার মধ্যে রয়েছে ইসলামী স্বর্ণযুগ(৭৫০- ১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) ও ইউরোপীয় রেনেসাঁ (১৩০০ শতক হতে শুরু)।[১৭][১৮] আধুনিক যুগের সূচনাকাল[১৯] ধরা হয় পঞ্চদশ শতক হতে অষ্টাদশ শতকের শেষ পর্যন্ত যার মধ্যে রয়েছে ইউরোপের আলোকিত যুগ। শিল্প বিপ্লব হতে বর্তমান সময় পর্যন্ত আধুনিক কাল বলে বিবেচিত। পাশ্চাত্য ইতিহাসে রোমের পতনকে প্রাচীন যুগের শেষ ও মধ্যযুগের সূচনা হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু পূর্ব ইউরোপ রোমান সাম্রাজ্য থেকে বাইজেনটাইন সাম্রাজের অধীনে আসে, যার পতন আরো অনেক পড়ে আসে। ১৫ শতকের মাঝামাঝি গুটেনবার্গআধুনিক ছাপাখানা আবিস্কার করেন[২০] যা যোগাযোগের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসে। ফলে মধ্যযুগের সমাপ্তি ঘটে এবং বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের সূত্রপাত হয়।[২১] ১৮ শতকের মধ্যে ইউরোপে জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসার এমন একটি চরম অবস্থায় উপনীত হয় যা শিল্প বিপ্লব|শিল্প বিপ্লবকে]] অবধারিত করে তুলে।[২২]
বিশ্বের অন্যান্য অংশে, বিশেষ করে প্রাচীন নিকট প্রাচ্য,[২৩][২৪][২৫] প্রাচীন চীন[২৬] ও প্রাচীন ভারতে সভ্যতা ভিন্নভাবে বিবর্তিত হয়, যেমন চীনের চার অনন্য আবিস্কার, ইসলামের স্বর্ণযুগভারতীয় গণিত। তবে ১৮ শতকের পর হতে ব্যাপক ব্যবসা-বাণিজ্য ও উপনিবেশায়ন এর ফলে সভ্যতাগুলো বিশ্বায়িত হতে থাকে। গত ৫'শ বছরে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার, জ্ঞান-বিজ্ঞান, ব্যবসা-বাণিজ্য, অস্ত্রের ধ্বংসক্ষমতা, পরিবেশগত ক্ষতি প্রভৃতি অসামান্য গতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বর্তমান বিশ্বের মানুষের সামনে একই সাথে ব্যাপক সম্ভাবনা ও বিপদ এর দ্বার উন্মোচন করেছে।