বুধবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১৫

বিশ্বের ইতিহাস

বিশ্বের ইতিহাস বলতে এখানে মানুষের ইতিহাস বোঝানো হয়েছে, যা মূলত প্যালিওলিথিক যুগে পৃথিবী জুড়ে শুরু হয়। পৃথিবী গ্রহের ইতিহাস থেকে এটি পৃথক। আদিম যুগ থেকে প্রাপ্ত সকল প্রত্নতাত্ত্বিক ওলিখিত দলিল এর আওতাভুক্ত। লেখন রীতি আবিস্কারের মধ্য দিয়ে প্রাচীন প্রামাণ্য ইতিহাসের[১] শুরু হয়।[২][৩] যদিও লেখন রীতি আবিস্কারপূর্ব যুগের সভ্যতার নিদর্শনও পাওয়া গেছে। প্রাগৈতিহাসিক যুগের সূচনা ঘটে প্যালিওলিথিক বা আদি প্রস্তর যুগে। সেখান থেকে সভ্যতা প্রবেশ করে নব্য প্রস্তর যুগ বা নিওলিথিক যুগে এবং কৃষি বিপ্লবের (খ্রিষ্টপূর্ব ৮০০০-খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০০ অব্দ) সূচনা ঘটে। নিওলিথিক বিপ্লবে উদ্ভিদ ও পশুর নিয়মানুগ চাষপদ্ধতি রপ্ত করা মানব সভ্যতার একটি অনন্য মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত।[৪][৫][৬]কৃষির উন্নয়নের সাথে সাথে বেশিরভাগ মানুষ যাযাবর জীবনযাত্রা ত্যাগ করে স্থায়ীভাবে কৃষকের জীবন গ্রহণ করে। তবে বহু সমাজে যাযাবর জীবনব্যবস্থা রয়ে যায়, বিশেষ করে ভৌগোলিকভাবে বিচ্ছিন্ন অঞ্চল ও যেখানে আবাদযোগ্য উদ্ভিদ প্রজাতির অভাব রয়েছে। কৃষি থেকে প্রাপ্ত খাদ্য-নিরাপত্তা ও উদ্বৃত্ত উৎপাদন এর ফলে গোষ্টীগুলো ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়ে আরও বড় সামাজিক প্রতিষ্টানের জন্ম দেয়। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নও এক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।
কৃষির উন্নতির সাথে সাথে শস্য উৎপাদনব্যবস্থারও বিকাশ ঘটে, যা সমাজে শ্রমবিভাগকে ত্বরান্বিত করে। শ্রমবিভাগের পথ ধরে সমাজে সুবিধাপ্রাপ্ত উচ্চশ্রেণীর উন্মেষ ঘটে ও শহরগুলো গড়ে উঠে। সমাজে জটিলতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে লেখন ও হিসাব পদ্ধতির ব্যবহার জরুরী হয়ে পড়ে।[৭] হ্রদ ও নদী তীরবর্তী এলাকাগুলোতে খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০০ অব্দের মধ্যে অনেক শহর গড়ে উঠে। এদের মধ্যে উন্নতি ও উৎকর্ষতার দিক দিয়ে মেসোপটেমিয়ার সভ্যতা,[৮] মিশরের নীলনদ তীরবর্তী সভ্যতা[৯][১০][১১] ও সিন্ধু সভ্যতা[১২][১৩][১৪] উল্লেখ্যযোগ্য। একই ধরণের সভ্যতা সম্ভবত চীনের প্রধান নদীগুলোর তীরেও গড়ে উঠেছিল কিন্তু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো থেকে এব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হয়নি।
প্রাচীন পৃথিবীর(প্রধানত ইউরোপ, তবে নিকট প্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকাও অন্তর্ভুক্ত) ইতিহাসকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়। ৪৬৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত প্রাচীন যুগ; ৫ম থেকে পঞ্চদশ শতাব্দী পর্যন্ত মধ্য যুগ,[১৫][১৬] যার মধ্যে রয়েছে ইসলামী স্বর্ণযুগ(৭৫০- ১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) ও ইউরোপীয় রেনেসাঁ (১৩০০ শতক হতে শুরু)।[১৭][১৮] আধুনিক যুগের সূচনাকাল[১৯] ধরা হয় পঞ্চদশ শতক হতে অষ্টাদশ শতকের শেষ পর্যন্ত যার মধ্যে রয়েছে ইউরোপের আলোকিত যুগ। শিল্প বিপ্লব হতে বর্তমান সময় পর্যন্ত আধুনিক কাল বলে বিবেচিত। পাশ্চাত্য ইতিহাসে রোমের পতনকে প্রাচীন যুগের শেষ ও মধ্যযুগের সূচনা হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু পূর্ব ইউরোপ রোমান সাম্রাজ্য থেকে বাইজেনটাইন সাম্রাজের অধীনে আসে, যার পতন আরো অনেক পড়ে আসে। ১৫ শতকের মাঝামাঝি গুটেনবার্গআধুনিক ছাপাখানা আবিস্কার করেন[২০] যা যোগাযোগের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসে। ফলে মধ্যযুগের সমাপ্তি ঘটে এবং বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের সূত্রপাত হয়।[২১] ১৮ শতকের মধ্যে ইউরোপে জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসার এমন একটি চরম অবস্থায় উপনীত হয় যা শিল্প বিপ্লব|শিল্প বিপ্লবকে]] অবধারিত করে তুলে।[২২]
বিশ্বের অন্যান্য অংশে, বিশেষ করে প্রাচীন নিকট প্রাচ্য,[২৩][২৪][২৫] প্রাচীন চীন[২৬] ও প্রাচীন ভারতে সভ্যতা ভিন্নভাবে বিবর্তিত হয়, যেমন চীনের চার অনন্য আবিস্কার, ইসলামের স্বর্ণযুগভারতীয় গণিত। তবে ১৮ শতকের পর হতে ব্যাপক ব্যবসা-বাণিজ্য ও উপনিবেশায়ন এর ফলে সভ্যতাগুলো বিশ্বায়িত হতে থাকে। গত ৫'শ বছরে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার, জ্ঞান-বিজ্ঞান, ব্যবসা-বাণিজ্য, অস্ত্রের ধ্বংসক্ষমতা, পরিবেশগত ক্ষতি প্রভৃতি অসামান্য গতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বর্তমান বিশ্বের মানুষের সামনে একই সাথে ব্যাপক সম্ভাবনা ও বিপদ এর দ্বার উন্মোচন করেছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন